টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার সেরা ১০টি উপায়
কিভাবে টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করা যায় অথবা TikTok থেকে টাকা ইনকাম করার উপায়গুলো কী কী এই ধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর আজকাল প্রত্যেকেই জানতে চাইছেন।
কেননা বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে লোকেরা শর্ট ভিডিও বানিয়ে টিকটকে আপলোড করে সেখান থেকে টাকা ইনকাম করার কথা ভাবছেন।
আপনিও যদি টিকটকে নিজের বানানো short video আপলোড করে টাকা রোজগার করার কথা ভাবছেন, তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন।
কারণ, আজকের আর্টিকেলে আমি টিকটক থেকে অর্থ উপার্জন করার প্রতিটি উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
আপনার টিকটক একাউন্টে যদি বিশাল ফলোয়ার বেস থাকে, তাহলে আর্টিকেলে দেওয়া টিপসগুলোর সাহায্যে আপনি টিকটক থেকে ভালো পরিমাণে টাকা আয় করতে পারবেন।
টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার বিষয়ে প্রায়ই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
টিকটক হলো একটি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম যা ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিকভাবে লঞ্চ করা হয়। এরপর মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই টিকটক বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
মোবাইলের মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি ভিডিও তৈরি, এডিট এবং শেয়ার করা যায়। এতে ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের সৃজনশীলতা (creativity) প্রদর্শন করতে পারেন।
টিকটকের ভিডিওগুলো সাধারণত ১৫ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই ধরনের ছোটো ছোটো ভিডিওগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই বিনোদন পেতে পারেন এবং নতুন নতুন ভিডিও দেখতে অধিক পছন্দ করে থাকেন।
আর এজন্য শর্ট ভিডিও ক্রিয়েটররা টিকটকের মাধ্যমে সহজেই লোকদের বিনোদন দিতে পারেন, তাদের সৃজনশীলতা প্রদর্শন করতে পারেন এবং বিশাল ফ্যানবেসকে কাজে লাগিয়ে টিকটক থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
টিকটক থেকে আয়ের ক্ষেত্রে লোকেরা সাধারণত যে প্রশ্নগুলো করে থাকেন সেগুলো নিচে উত্তরসহ উল্লেখ করা হলো।
ভিডিও আপলোড করে টিকটক থেকে টাকা রোজগার করা যায়?
হ্যাঁ, টিকটকে ভিডিও আপলোড করে টাকা রোজগার করা সম্ভব।
বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক তরুণ তরুণীরা টিকটক প্লাটফর্মে তাদের বানানো শর্ট ভিডিও গুলো আপলোড করে ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছেন।
আমাদের দেশে এমন অনেক টিকটকার রয়েছেন যারা টিকটকের মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করছেন।
এছাড়াও আপনি যদি আপনার সৃজনশীলতার মাধ্যমে টিকটকে ভাইরাল হতে পারেন এবং আপনার একাউন্টে লাখ লাখ ফলোয়ার থাকে, তাহলে আপনি নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা শুরু করতে পারবেন।
আপনি আপনার টিকটক ফলোয়ারদের ইউটিউব সাবস্ক্রাইবারে রূপান্তর করতে পারবেন এবং ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে টাকা রোজগার করতে পারবেন।
টিকটকে কত ভিউতে কত টাকা আয় করা যায়?
টিকটকে ভিউয়ের উপর ভিত্তি করে সরাসরি টাকা ইনকাম করার কোনো সিস্টেম নেই। এটি কনটেন্টের ধরন অনুযায়ী ও অঞ্চলভেদে আলাদা হয়ে থাকে।
তবে কিছু দেশে টিকটক “ক্রিয়েটর ফান্ড” নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে, যেখানে ভিউয়ের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়েটররা অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
তবে এটি বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে এখনো চালু হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যে ক্রিয়েটর ফান্ড available রয়েছে, যেখানে ক্রিয়েটররা সাধারণত প্রতি ১,০০০ ভিউতে গড়ে $০.০২ থেকে $০.০৪ ডলার আয় করতে পারেন।
অনেক ক্রিয়েটর তাদের টিকটক প্রোফাইলে বিভিন্ন product এর affiliate link শেয়ার করে আয় করেন। সেই লিংকের মাধ্যমে যদি কেউ কোনো product কিনে তাহলে এর বিনিময়ে তারা commission পেয়ে থাকেন।
জনপ্রিয় টিকটকাররা brand sponsorship এর মাধ্যমে টিকটক থেকে আয় করতে পারেন।
TikTok থেকে ইনকামের জন্য কতজন ফলোয়ার থাকা প্রয়োজন?
টিকটক থেকে আয় করার জন্য ফলোয়ারের সংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে টিকটক থেকে উপার্জনের বিভিন্ন উপায়গুলোর জন্য ফলোয়ার সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়।
তবে টিকটক ক্রিয়েটর ফান্ডে যোগ দিতে হলে সাধারণত ১০,০০০ বা তার বেশি ফলোয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়া, আপনার টিকটক একাউন্টে গত ৩০ দিনে ১০,০০০ বা তার বেশি ভিউস থাকতে হবে এবং আপনার বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। তবে এই পদ্ধতি বাংলাদেশে এখনো উপলব্ধ নয়।
আপনি যদি লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে উপার্জন করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক ফলোয়ার দরকার না হলেও যত বেশি ফলোয়ার আপনার থাকবে, লাইভে তত বেশি পরিমাণে ভিউস এবং গিফট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাছাড়া ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ পাওয়ার জন্য সাধারণত ১০,০০০ বা তার বেশি ফলোয়ার থাকলে ভালো হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে ৫০,০০০ বা তার বেশি ফলোয়ার থাকলে বিভিন্ন ব্রান্ড আপনাকে স্পনসরশিপ দিতে আগ্রহী হবে।
ফলোয়ার সংখ্যা, reach, engagement ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্রান্ড sponsorship দিয়ে থাকে।
রিলেটেড আর্টিকেল: ফেসবুক থেকে ইনকামের জন্য কত ফলোয়ার প্রয়োজন?
টিকটক থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়?
TikTok থেকে মাসিক কত টাকা রোজগার করা যায় তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার টিকটক একাউন্টে ফলোয়ার সংখ্যা, ভিউস, এনগেজমেন্ট ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে আপনার ইনকামের পরিমাণ।
যাদের টিকটক একাউন্টে লাখ লাখ ফলোয়ার রয়েছে, তারা বিভিন্ন ব্রান্ডের কাছ থেকে sponsorship পেয়ে থাকেন এবং সেই ব্রান্ডের product এবং service গুলো দর্শকদের সামনে promotion করেন।
এতে কোম্পানি বা ব্রান্ডসমূহ তাদের ভালো পরিমাণে অর্থ পে করে থাকে।
লাখ লাখ ফলোয়ার থাকা একজন টিকটকার বিভিন্ন উপায়ে টিকটক থেকে উপার্জন করতে পারেন।
অন্যদিকে একজন নতুন টিকটকারের ফলোয়ার সংখ্যা, আইডিতে রিচ এবং এনগেজমেন্ট খুবই কম থাকে। ফলে তার পক্ষে টিকটকের মাধ্যমে টাকা রোজগার করাটা অত্যন্ত কঠিন।
অবশ্যই পড়ুন: ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়?
কিভাবে টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করা যায়? সেরা ১০টি উপায়
ইনকামের উপায়: | কাজ: |
---|---|
১. টিকটক ক্রিয়েটর ফান্ড প্রোগ্রাম | প্রোফাইলে আসা ভিউস, রিচ, এনগেজমেন্ট ইত্যাদির জন্য সরাসরি অর্থ পাওয়া যায়। |
২. লাইভ স্ট্রিমিং | দর্শকদের কাছ থেকে ভার্চুয়াল গিফট সংগ্রহ করা যায়। |
৩. নিজের পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি | ফলোয়ারদের নিকট নিজের product বিক্রি করে ইনকাম করা যায়। |
৪. ইউটিউব এবং অন্যান্য প্লাটফর্মে দর্শকদের ড্রাইভ করা | দর্শকদের ইউটিউব বা ফেসবুকে নিয়ে গিয়ে মনিটাইজেশন, স্পনসরশিপ ইত্যাদির মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। |
৫. ব্রান্ড স্পনসরশিপ | বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্রান্ডের কাছ থেকে sponsorship পেতে পারবেন। |
৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং | বিভিন্ন company বা brand এর product এর মার্কেটিং করে ইনকাম করতে পারবেন। |
৭. মিউজিক প্রমোশন | অনেক শিল্পী বা মিউজিক কোম্পানির song প্রচারের মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। |
৮. ব্লগ বা ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনা | টিকটকের মাধ্যমে আপনার ব্লগ সাইটে ট্রাফিক নিতে পারবেন এবং ওয়েবসাইটের আয় বাড়াতে পারবেন। |
৯. বিজ্ঞাপনী কনটেন্ট তৈরি করা | বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন টাইপের ভিডিও বানিয়ে আয় করতে পারবেন। |
১০. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি | নিজের ইবুক বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট আপনার দর্শকদের নিকট বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। |
১. টিকটক ক্রিয়েটর ফান্ড প্রোগ্রামে যোগ দিন
TikTok Creator Fund হলো টিকটকের এমন একটি প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীদেরকে তাদের ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে আয় করার সুবিধা প্রদান করে থাকে।
এই প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
প্রথমত, আপনার বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আপনার টিকটক প্রোফাইলে কমপক্ষে ১০,০০০ followers থাকতে হবে।
তৃতীয়ত, বিগত ৩০ দিনে আপনার upload করা ভিডিওগুলোতে মোট ১,০০,০০০ (১ লাখ) ভিউস থাকতে হবে।
এইসব শর্ত পূরণ হয়ে গেলে Settings >> Creator Tools >> TikTok Creator Fund-এ গিয়ে এই প্রোগ্রামের জন্য apply করতে পারবেব।
ক্রিয়েটর ফান্ডে আবেদন করার পর টিকটক আপনার আবেদন পর্যালোচনা করে দেখবে এবং সবকিছু সঠিক থাকলে টিকটক আপনার একাউন্টকে অনুমোদন দিয়ে দিবে।
এরপর ভিডিওর এনগেজমেন্ট রেট, ভিউসের পরিমাণ এবং ad impression এর উপর ভিত্তি করে টিকটক থেকে অর্থ উপার্জন করা শুরু করতে পারবেন।
ক্রিয়েটর ফান্ডের মাধ্যমে আপনার ভিডিওতে প্রতিদিনের ভিউস অনুযায়ী অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
২. লাইভ স্ট্রিমিং করুন
লাইভ স্ট্রিমিং হলো টিকটকের মাধ্যমে ইনকাম করার একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। টিকটকে লাইভ স্ট্রিমিং করে ক্রিয়েটররা সরাসরি দর্শকদের সাথে সংযুক্ত হতে পারেন এবং বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারেন।
এর মাধ্যমে ক্রিয়েটররা দর্শকদের কাছ থেকে virtual gift পেতে পারেন।
Live streaming এর মাধ্যমে TikTok থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য আপনার বয়স অবশ্যই ১৮ বছর হতে হবে। একাউন্টে কমপক্ষে ১০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে এবং আপনার টিকটক একাউন্টটি personal account এর পরিবর্তে pro account হতে হবে।
আপনি Go Live অপশনে ক্লিক করে সরাসরি লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করতে পারবেন। লাইভে প্রচুর দর্শক পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি আকর্ষণীয় title দিতে হবে।
লাইভ স্ট্রিমিং চলাকালে দর্শকরা আপনাকে বিভিন্ন ধরনের গিফট বা উপহার পাঠাতে পারেন যা আপনি টিকটক কয়েন হিসেবে পেতে পারবেন।
দর্শকদের থেকে প্রাপ্ত এই গিফটগুলো টিকটক থেকে টাকা হিসেবে উত্তোলন করা যায়।
এটা অনেকটা Facebook star এর মতো কাজ করে। ফেসবুক স্টার থেকে টাকা ইনকাম এর ক্ষেত্রে লোকেরা ফেসবুক প্রোফাইল বা পেইজে লাইভ স্ট্রিমিং করে থাকেন এবং সেই সময় দর্শকরা স্টার পাঠাতে পারেন।
আর ক্রিয়েটররা প্রত্যেকটি স্টারের বিনিময়ে ফেসবুক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রোজগার করে থাকেন।
৩. নিজের প্রোডাক্ট বা পরিষেবা বিক্রি করুন
ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মতো টিকটকের মাধ্যমেও নিজের প্রোডাক্ট বা পণ্য বিক্রি করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
টিকটক একাউন্টের মাধ্যমে নিজের প্রোডাক্টের প্রচার এবং বিক্রির জন্য আপনাকে কিছু কৌশল অনুসরণ করতে হবে।
প্রথমত, আপনাকে আকর্ষণীয় এবং ক্রিয়েটিভ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। এভাবে আপনার টিকটক ফলোয়ারের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।
যখন আপনার একাউন্টে হাজার হাজার ফলোয়ার হয়ে যাবে, তখন আপনি লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি আপনার প্রোডাক্টের প্রচার করতে পারবেন। লাইভে এসে প্রোডাক্টের ব্যবহার এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারবেন।
লাইভে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সবসময় তাদের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন এবং তাদের প্রোডাক্ট কেনার জন্য উৎসাহিত করবেন।
আপনার টিকটক প্রোফাইলের বায়োতে প্রোডাক্টের লিংক, ওয়েবসাইট বা শপ এর লিংক যুক্ত করতে পারেন। এর মাধ্যমে দর্শকরা সরাসরি আপনার প্রোডাক্টের পেইজে প্রবেশ করতে পারবে।
মনে রাখবেন, যদি টিকটকে আপনার প্রচুর পরিমাণে ফলোয়ার থাকে এবং আপনার প্রতি ফলোয়ারদের আস্থা তৈরি করতে পারেন, তাহলে নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করে আপনি টিকটক থেকে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
৪. ইউটিউব এবং অন্যান্য প্লাটফর্মে দর্শকদের ড্রাইভ করুন
আপনার টিকটক একাউন্টে যদি লাখ লাখ ফলোয়ার থাকে তাহলে আপনি আপনার ফলোয়ারদের অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে নিয়ে আসতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি ফেসবুক পেইজ খুলতে পারেন এবং সেখানে নিয়মিত ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতে পারেন।
এরপর আপনার টিকটক ফলোয়ারদের ফেসবুক পেইজে ড্রাইভ করে আনতে পারবেন এবং Facebook in-stream ads কিংবা Reels monetization এর মাধ্যমে ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে আপনার ফলোয়ারদেরকে ইউটিউব চ্যানেল subscribe করার জন্য বলতে পারেন।
এরপর যখন আপনার চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার, ভিউস এবং ওয়াচ টাইম বেড়ে যাবে, তখন আপনি ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে ইউটিউব থেকে টাকা রোজগার করা শুরু করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, বেশিরভাগ টিকটকাররা প্রথমে টিকটকে ভাইরাল বা জনপ্রিয় হয়ে তারপর ইউটিউব চ্যানেল শুরু করে সেখান থেকে ইনকাম করে থাকেন।
৫. ব্রান্ড স্পনসরশিপ
টিকটক থেকে টাকা ইনকাম করার একটি জনপ্রিয় এবং লাভজনক উপায় হলো ব্রান্ড স্পন্সরশীপ (brand sponsorship)।
এর মাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা বিভিন্ন ব্র্যান্ড বা কোম্পানির promotional content তৈরি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
স্পনসরশিপ পাওয়ার জন্য পাওয়ার জন্য অবশ্যই টিকটকে আপনার বিশাল ফলোয়ার বেস থাকতে হবে এবং আপনার একাউন্টে এনগেজমেন্ট রেট অত্যন্ত ভালো থাকতে হবে।
ফলোয়ার এবং এনগেজমেন্ট বাড়ানোর জন্য আপনাকে নিয়মিত মানসম্মত এবং আকর্ষণীয় কনটেন্ট আপলোড করতে হবে।
যদি আপনি ট্রেন্ডিং টপিকের ওপর কনটেন্ট তৈরি করেন এবং জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগসমূহ ব্যবহার করেন তাহলে আপনার প্রোফাইলে ভিউস এর সংখ্যা বাড়বে।
মনে রাখবেন, বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্র্যান্ড সাধারণত তাদের প্রোডাক্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্রিয়েটরদের sponsorship প্রদানে আগ্রহী থাকেন।
এজন্য যদি আপনি নির্দিষ্ট একটি নিস যেমন: ফ্যাশন, ট্র্যাভেল, ফিটনেস, টেক, বিউটি ইত্যাদির ওপর আপনার টিকটক একাউন্টে সকল ভিডিও আপলোড করেন, তাহলে আপনার স্পনসরশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করুন
টিকটক থেকে টাকা রোজগারের আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হলো এফিলিয়েট মার্কেটিং। এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট বা পণ্যের প্রোমোশন করে ইনকাম করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে যেকোনো প্রোডাক্ট প্রতিবার বিক্রির জন্য আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কমিশন হিসেবে পেতে থাকবেন।
যদি আপনার টিকটক একাউন্টে লাখ লাখ ফলোয়ার থাকে, তাহলে এই প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
এজন্য আপনাকে যেকোনো একটি নিস বা বিষয়ের উপর ভিডিও বানিয়ে টিকটকে আপলোড করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, টেকনোলজি, বিউটি, ট্রাভেল, ফিটনেস ইত্যাদি।
এরপর আপনার নিসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে রেজিস্টার করতে হবে এবং affiliate link সংগ্রহ করে আপনার টিকটক ভিডিওর ডেসক্রিপশনে শেয়ার করতে হবে।
এরপর যখন কেউ আপনার শেয়ার করা লিংকে ক্লিক করে প্রোডাক্ট ক্রয় করবে, তখন আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কমিশন পাবেন।
এভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে টিকটক থেকে আয় করার জন্য আপনাকে নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করতে হবে এবং দর্শকদের অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানাতে হবে।
৭. মিউজিক প্রোমোশন করুন
আপনার টিকটক একাউন্টে যদি প্রচুর পরিমাণ ফলোয়ার থাকে এবং আপনার বানানো কনটেন্ট যদি লোকেরা অধিক পছন্দ করে থাকে, তাহকে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির music promotion এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
বিভিন্ন মিউজিক কোম্পানি এবং শিল্পীরা তাদের গান প্রচার করার জন্য টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে চুক্তি করে থাকেন। তারা সাধারণত মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোয়ার থাকা টিকটকারদের সাথে এই ধরনের চুক্তি করে থাকেন।
তাই আপনার যদি টিকটকে বিশাল ফ্যানবেস থাকে তাহলে বিভিন্ন মিউজিক কোম্পানি বা শিল্পীরা তাদের গান আপনাকে স্পন্সরড পোস্ট করার জন্য বলবে। এর বিনিময়ে তারা আপনাকে অর্থ প্রদান করবে।
তাছাড়া মিউজিক বা এন্টারটেইনমেন্ট ব্র্যান্ডগুলো নতুন গান বা এলবাম রিলিজ হলে সেটার প্রমোশনের জন্য টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে যোগাযোগ করে। এই ধরনের কোলাবোরেশন করলে ব্র্যান্ড আপনার টিকটক কনটেন্টে তাদের প্রোডাক্টের প্রচারণা চালাবে এবং এর জন্য তারা আপনাকে payment করবে।
৮. ব্লগ বা ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসুন
যদি আপনার টিকটক আইডির পাশাপাশি একটি অনলাইন ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনি সেই ওয়েবসাইটে টিকটক থেকে ট্রাফিক বা ভিজিটর নিতে পারবেন।
আপনার ভিডিও টপিকের সাথে সম্পর্কিত কনটেন্টগুলো ব্লগে পোস্ট করে তা আপনার দর্শকদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এভাবে আপনি সার্চ ইঞ্জিনের পাশাপাশি টিকটক থেকেও আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনতে পারবেন এবং গুগল এডসেন্স থেকে আপনার ইনকাম বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
বর্তমানে অনেক ব্লগার তাদের ব্লগ বা ওয়েবসাইটে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এই ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ট্রাফিক নিচ্ছেন এবং ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করছেন।
রিলেটেড আর্টিকেল: ওয়েবসাইট খুলে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?
৯. বিজ্ঞাপনী কনটেন্ট তৈরি করুন
আপনি যদি ক্রিয়েটিভ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে দক্ষ হন, তাহলে টিকটকে বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনী কনটেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবেন।
বর্তমানে অধিকাংশ ব্রান্ড তাদের প্রোডাক্ট বা পণ্য প্রচার করার জন্য জনপ্রিয় প্লাটফর্ম টিকটক ব্যবহার করে থাকেন। তারা টিকটকের জনপ্রিয় ক্রিয়েটরদের সাথে স্পন্সরশিপ বা কোলাবোরেশন করে।
যদি আপনার ফলোয়ার সংখ্যা প্রচুর হয় এবং আপনি নিয়মিত ভালো মানের কনটেন্ট আপলোড করে থাকেন, তাহলে ব্র্যান্ডগুলো আপনার সাথে বিজ্ঞাপন চুক্তি করতে আগ্রহী হবে। এর জন্য তারা আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে।
আপনাকে শুধুমাত্র তাদের পণ্য বা পরিষেবা নিয়ে বিজ্ঞাপন টাইপের সুন্দর কনটেন্ট বানিয়ে আপনার দর্শকদের সাথে শেয়ার করতে হবে।
আপনি টিকটকে বিভিন্ন পণ্যের review বা recommend করেও আয় করতে পারবেন। অনেক ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের রিভিউ করার জন্য টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে পণ্য পাঠিয়ে থাকে।
টিকটক প্লাটফর্মে আপনার প্রচুর জনপ্রিয়তা থাকলে আপনিও এই ধরনের প্রোডাক্ট রিভিউ ভিডিও বানিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
১০. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করুন
আপনি বেশ কিছু উপায়ে টিকটকে নিজের ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করে ইনকাম করতে পারবেন।
ডিজিটাল প্রোডাক্ট যেমন ই-বুক, অনলাইন কোর্স, ডিজিটাল আর্ট, প্রিন্টেবল টেমপ্লেট, মিউজিক বা সাউন্ড প্যাক, প্রেজেন্টেশন টেমপ্লেট, ফটো ও ভিডিও ফিল্টার ইত্যাদি আপনি আপনার দর্শকদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
প্রোডাক্ট সহজে বিক্রি করার জন্য আপনার ডিজিটাল প্রোডাক্টের ডেমো বা প্রিভিউ টিকটকে শেয়ার করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার প্রোডাক্টটি ফটো বা ভিডিও ফিল্টার হয়, তাহলে ফিল্টারটি কিভাবে কাজ করে সেটা ভিডিও আকারে লোকদের দেখাতে পারেন। এতে লোকেরা আপনার পরিষেবাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং ভালো লাগলে কিনতে আগ্রহী হবেন।
টিকটক ভিডিওতে সরাসরি লিংক যুক্ত করা যায় না বলে প্রোফাইলের বায়োতে আপনার ডিজিটাল প্রোডাক্টের লিংক যুক্ত করতে পারেন। যেকোনো ভিডিওর ক্যাপশনে বা কমেন্টে “Link in Bio” উল্লেখ করে ক্রেতাদেরকে আপনার বায়ো চেক করতে উৎসাহিত করতে পারেন।
তাছাড়াও টিকটকে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে আপনার পণ্যের প্রচারের দারুণ সুযোগ রয়েছে। লাইভে আপনার ডিজিটাল প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারেন এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। এতে তারা আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে সরাসরি ধারণা পাবে এবং আগ্রহী হলে ক্রয় করবে।
টিকটক থেকে টাকা ইনকাম: FAQ’s
TikTok থেকে ইনকাম করার এমনিতে অনেকগুলো উপায় রয়েছে। তবে টিকটক প্লাটফর্ম থেকে টাকা আয় করার জনপ্রিয় কয়েকটি উপায় হলো টিকটক ক্রিয়েটর ফান্ড, ব্রান্ড স্পনসরশীপ, ভার্চুয়াল গিফট সংগ্রহ, দর্শকদের ফেসবুক বা ইউটিউবে ড্রাইভ করা ইত্যাদি।
TikTok দেখে অর্থ উপার্জন করা যাবে এরকম কোনো উপায় নেই। অর্থ উপার্জন করার জন্য আপনাকে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে হবে। ভালো মানের এবং আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করতে পারলে আপনি ফেসবুক, ইউটিউব অথবা টিকটকের মতো ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মগুলো থেকে সহজেই টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যদি video upload করে টাকা রোজগার করার কথা ভাবছেন, তাহলে এর জন্য সেরা দুইটি প্লাটফর্ম হলো ফেসবুক এবং ইউটিউব। এসব সাইটে আপনি ভিডিও মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে সরাসরি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
সর্বশেষ
তাহলে বন্ধুরা, কিভাবে টিকটক থেকে টাকা আয় করা যায় এ বিষয়ে আশা করি আজকের আর্টিকেলে আপনারা ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
আমি টিকটক থেকে ইনকামের প্রত্যেকটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর উপায়গুলো সম্পর্কে আর্টিকেলে আলোচনা করেছি।
তবে, ভিডিও আপলোড করে টাকা আয় করার জন্য আমি ইউটিউব এবং ফেসবুককে সবচেয়ে সুবিধাজনক প্লাটফর্ম হিসেবে মনে করি।
কেননা বর্তমানে ফেসবুক এবং ইউটিউবে প্রায় সকল ধরনের ভিডিও লোকেরা দেখতে অধিক পছন্দ করে থাকেন।
ইউটিউবে মনিটাইজেশন চালু করার মাধ্যমে আপনি নিজের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে সরাসরি গুগল এডসসেন্স এর মাধ্যমে আইয় করতে পারবেন।
একইভাবে ফেসবুকেও আপনি মনিটাইজেশন ফিচারের মাধ্যমে আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করতে পারবেন।
তবে যদি ইতোমধ্যেই আপনার টিকটক একাউন্টে হাজার হাজার ফলোয়ার আছে, তাহলে আপনি আর্টিকেলে উল্লেখ করা উপায়গুলোর সাহায্যে TikTok থেকে আয় করতে পারবেন।
অবশ্যই পড়ুন: