ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কত টাকা লাগবে? জেনে নিন
একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কত টাকা লাগবে, কিভাবে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন এবং ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায় এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
বর্তমান সময়ে ঘরে বসে অনলাইনে ফ্রি টাকা ইনকাম করার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ইউটিউব। YouTube হলো বিশ্বের সেরা একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মিলিয়ন মিলিয়ন লোকেরা তাদের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ইউটিউব ব্যবহার করছেন। এর পাশাপাশি যেকোনো বিষয়ে জানার জন্য অথবা দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য তারা ইউটিউব ভিডিও দেখে থাকেন।
আজকাল লোকেরা যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্য জানার জন্য গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ার চেয়ে ইউটিউবে সেই রিলেটেড ভিডিও দেখতে অধিক পছন্দ করে থাকেন।
আর এ কারণে গুগলের পর ইউটিউব বিশ্বের সেরা দ্বিতীয় সার্চ ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে। তাই লোকেরা ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে ইউটিউবে চ্যানেল (YouTube channel) তৈরি করছেন এবং জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য ভিডিও এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষের সাথে শেয়ার করছেন।
ইউটিউব চ্যানেল কি?
YouTube Channel এর মাধ্যমে লোকেরা ইউটিউব প্লাটফর্মে তাদের বানানো ভিডিওগুলো আপলোড (upload) করতে পারেন।
যেকেউ চাইলে নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে পারে এবং সেখানে নানা ধরনের ভিডিও আপলোড করতে পারে।
বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ইউটিউব চ্যানেল বানানো যায়, যেমন: বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, খেলাধুলা, মতামত, স্বাস্থ্য টিপস, পড়াশোনা, চাকরি, সংগীত, কমেডি, সমাজ ইত্যাদি।
লোকেরা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে তাদের মতামত, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং পছন্দের বিষয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন এবং সেগুলো ইউটিউবে আপলোড করার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
যেকোনো একটি ইউটিউব চ্যানেলে নতুন নতুন ভিডিওগুলো দেখার জন্য লোকেরা সেই চ্যানেলকে subscribe করতে পারেন।
ইউটিউব চ্যানেল থেকে কি টাকা আয় করা সম্ভব?
দেখুন, ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা অবশ্যই সম্ভব। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার ইউটিউবার রয়েছেন, যারা তাদের চ্যানেলে প্রতিনিয়ত ভিডিও আপলোড করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছেন।
ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করার জন্য প্রথমেই দরকার হবে একটি ইউটিউব চ্যানেল। ইউটিউবে নিজের একট চ্যানেল খোলার পর সেখানে নিয়মিত নতুন নতুন ভিডিও আপলোড করতে হবে।
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর ভিডিও বানাতে হবে। আর আপনার আপলোড করা ভিডিওগুলো অবশ্যই নিজের বানানো বা ইউনিক (unique) হতে হবে।
এরপর যখন আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম সম্পূর্ণ হয়ে যাবে, তখন আপনি ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারবেন। তারপর আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।
এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে views এবং subscribers থাকা ইউটিউব চ্যানেল থেকে product promotion, sponsorship, affiliate marketing ইত্যাদি উপায়ে ভালো পরিমাণে টাকা আয় করা সম্ভব।
যদি আপনি বাড়িতে বসে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম করার কথা ভাবছেন, তাহলে ইউটিউব হলো আপনার জন্য সেরা একটি ব্যবসা আইডিয়া।
একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কত টাকা লাগবে?
বন্ধুরা, ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় এ বিষয়ে আগের আর্টিকেলে আমি আপনাদের বিস্তারিত বলে দিয়েছি।
ইউটিউব থেকে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করার জন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে একটি ইউটিউব চ্যানেল। এজন্য আপনাকে ইউটিউবে গিয়ে নিজের একটি চ্যানেল খুলে নিতে হবে।
কিন্তু আপনারা অনেকেই এই প্রশ্নটি করে থাকেন যে, একটি YouTube চ্যানেল খুলতে কত টাকা লাগে?
দেখুন, একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য আপনাকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। ইউটিউব সকলকে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
যেকেউ খুব সহজেই সম্পূর্ণ ফ্রিতে নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে সেখানে video upload করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
এখন, ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কী কী লাগে?
আপনার যদি একটি জিমেইল একাউন্ট (gmail account) থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই ইউটিউবে register করতে পারবেন। এরপর মাত্র পাঁচ মিনিটে আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন।
এজন্য আপনার একটি computer/laptop, smartphone এবং internet connection এর দরকার হবে।
একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার সম্পূর্ণ নিয়ম এখন নিচে আমি আপনাদের দেখিয়ে দিবো। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন।
কিভাবে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলা যায়?
নিচে মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম আমি আপনাদের স্টেপ বাই স্টেপ দেখিয়ে দিয়েছি।
স্টেপ ১:
প্রথমে আপনাকে Google Chrome, Firefox বা Brave যেকোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করতে হবে। এরপর ব্রাউজারে Desktop mode চালু করে নিতে হবে। এরপরে ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য প্রথম আপনাকে YouTube.com এর ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
যদি আগে থেকেই ব্রাউজারে আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট login করা থাকে তাহলে আপনি সরাসরি ইউটিউবে login করতে পারবেন। আর যদি gmail account login করা না থাকে, তাহলে আপনি ইউটিউবের হোমপেজ থেকে “sign in” এ ক্লিক করে জিমেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে ইউটিউবে সাইন ইন করবেন।
স্টেপ ২:
ইউটিউবে sign in করার পর profile icon এ click করতে হবে। এরপর Setting অপশনে ক্লিক করতে হবে। এখন আপনাকে নতুন একটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানে Your YouTube Channel লেখাটির পাশে “Create a Channel” অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
স্টেপ ৩:
তারপর আপনার Channel Name দিয়ে Create Channel অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
এখন আপনার ইউটিউব চ্যানেল তৈরি হয়ে যাবে। আপনি চাইলে আপনার চ্যানেলকে সাজাতে পারবেন। চ্যানেলে profile photo এবং cover photo যুক্ত করতে পারবেন।
এজন্য আপনাকে আবার প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করতে হবে। এরপর Your Channel অপশনটিতে যেতে হবে।
তারপর “CUSTOMIZE CHANNEL” অপশনটিতে ক্লিক করে Layout, Branding, Basic Info এই তিনটি আলাদা আলাদা options পেয়ে যাবেন। এগুলোর মাধ্যমে আপনার চ্যানেলকে সাজাতে পারবেন।
ইউটিউব চ্যানেল খুললে কিভাবে টাকা পাওয়া যায়?
উপরে দেখানো নিয়মে আপনি খুব সহজেই মোবাইল দিয়ে আপনার জিমেইল আইডির মাধ্যমে একটি প্রফেশনাল ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হলো, ইউটিউবে একটি চ্যানেল খোলার সাথে সাথেই কি টাকা ইনকাম করা যাবে?
দেখুন, আজকে একটা ইউটিউব চ্যানেল বানানোর পর কালকে থেকে আপনি চ্যানেল থেকে ইনকাম শুরু করতে পারবেন না।
কেননা ইউটিউব চ্যানেল থেকে অর্থ উপার্জন করার জন্য আপনাকে YouTube Partner Program এ যুক্ত হতে হবে। আর ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনার চ্যানেলের দ্বারা ইউটিউবের কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
যেমন,
- আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
- গত ১২ মাসে মোট ৪০০০ ঘন্টা ওয়চ টাইম থাকতে হবে।
আপনার ইউটিউব চ্যানেলের দ্বারা ইউটিউবের এই দুইটি শর্ত পূরণ হলে আপনি চ্যানেলে Monetization চালু করতে পারবেন। তারপর আপনার আপলোড করা ভিডিওগুলোতে গুগল এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পূরণ করার জন্য আপনাকে নিয়মিত ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করতে হবে।
অবশ্যই high quality video তৈরি করতে হবে, যাতে লোকেরা আপনার ভিডিওগুলো অধিক পছন্দ করে এবং আপনার নতুন ভিডিওগুলো দেখার জন্য আপনার চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করে।
রিলেটেড আর্টিকেল: ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার ৯টি কার্যকর উপায়
ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়?
দেখুন, ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে আপনি কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন এটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কেননা, ইউটিউব থেকে কি পরিমাণ অর্থ আপনি উপার্জন করতে পারবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার চ্যানেলে views এবং subscribers এর পরিমাণ যত বেশি থাকবে, ইউটিউব থেকে তত বেশি অর্থ আপনি উপার্জন করতে পারবেন।
আপনার ভিডিওতে ভিউস বেশি হলে অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে লোকেরা আপনার ভিডিও দেখলে ভিডিওতে দেখানো বিজ্ঞাপনগুলোতে ভিউস বেশি হবে। এতে আপনার ইনকামও বেশি হবে।
ইউটিউব থেকে উপার্জনের পরিমাণ আরও কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন: আপনি কোন বিষয় বা টপিকের ওপর ভিডিও তৈরি করছেন, CPC ও CPM কেমন পাচ্ছেন, কোন দেশের লোকেরা আপনার ভিডিও বেশি দেখছে ইত্যাদি।
সারা পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে লোকেরা ঘরে বসে তাদের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে এত বেশি পরিমাণে টাকা ইনকাম করছেন, যার জন্য তাদের আলাদাভাবে কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতে হচ্ছে না।
অনেক ইউটিউবার তাদের প্রতিভা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে YouTube থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন।
FAQs
ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য আপনাকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। সম্পূর্ণ ফ্রিতে আপনি ইউটিউবে নিজের এক বা একাধিক চ্যানেল খুলতে পারবেন এবং সেখানে ভিডিও আপলোড করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার জন্য আপনার একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার, ইন্টারনেট কানেকশন এবং জিমেইল একাউন্ট প্রয়োজন হবে।
সর্বশেষ
তাহলে বন্ধুরা, ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কত টাকা লাগবে এবং কী কী লাগবে এ বিষয়ে আশা করি আপনারা আজকের আর্টিকেলে জানতে পেরেছেন।
সেই সাথে কিভাবে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন সেটাও জানতে পেরেছেন।
যে বিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান বা দক্ষতা রয়েছে, সেই বিষয়ের উপর আপনি চ্যানেল বানাতে পারেন। এতে আপনি আপনার টপিকের উপর উন্নত মানের ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
মনে রাখবেন, “Content is king.” তাই যত ভালো ভিডিও আপনার দর্শকদের উপহার দিতে পারবেন, একজন সফল ইউটিউবার (successful youtuber) হয়ে ওঠার তত বেশি সুযোগ আপনার থাকবে।
যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন।
অবশ্যই পড়ুন: