পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করার সেরা ১০টি উপায় – ২০২৫
বর্তমানে অনেকেই নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য আয়ের পথ খুঁজে থাকেন। আপনিও যদি পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করার উপায় খুঁজছেন, তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
কেননা পড়ালেখার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের কার্যকর উপায়গুলো আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি।
ছাত্রছাত্রীদের মূল কাজ হলো পড়ালেখা করা। তবে বর্তমানে অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জন করছেন।
এর ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পকেট খরচ চালাতে পারে এবং পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
আর ঘরে বসে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য আপনার কোনো ধরনের একাডেমিক সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন নেই।
কেন পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করা দরকার?
আজকাল অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করে ইনকাম করতে অধিক আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কেননা কোনো একটি কাজ করে টাকা রোজগার করলে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালানো যায় এবং এতে পরিবারের ওপর চাপ কমে।
ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখার পাশাপাশি টাকা রোজগার করলে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনের পাশাপাশি প্রফেশনাল স্কিলস ও এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করতে পারেন।
এছাড়াও বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার আত্মবিশ্বাস এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন।
এটি আপনাকে ভবিষ্যতে প্রফেশনাল লাইফে প্রবেশের আগে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন এবং সময় ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ এবং পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
আর যখন আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবেন, তখন এটা আপনাকে আপনার সহপাঠীদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে।
পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট-টাইম কাজ করে কি টাকা ইনকাম করা সম্ভব?
হ্যাঁ, অবশ্যই পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট-টাইম কাজ করে টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
বর্তমান সময়ে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য বা পকেট খরচের টাকা ইনকাম করার জন্য অনলাইনে কাজ করছেন।
আজকাল ছাত্রদের অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয়। স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার প্রচুর শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ করে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করছে।
তাছাড়া প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম করার উপায়গুলোর সাহায্যেও অনেক স্টুডেন্টরা অনলাইনে ইনকাম করছেন।
আমি নিজেও একজন কলেজ স্টুডেন্ট। আমি আমার স্কুল লাইফ থেকেই ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করছি।
আপনি জানলে অবাক হবেন যে, আমি শুধুমাত্র part-time ব্লগিং করার মাধ্যমে অনলাইন থেকে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছি।
এখন আমি চাইলে আমার কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে এর থেকেও বেশি টাকা প্রতি মাসে ইনকাম করতে পারি এবং ব্লগিংকে full time পেশা হিসেবে নিতে পারি।
তাহলে দেখুন, ছাত্রছাত্রীরা অবশ্যই তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি অনলাইনে টাকা রোজগার করতে পারবেন।
এমনকি কাজের পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকলে ছাত্র অবস্থাতেই প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব।
পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করার সেরা ১০টি উপায়
আপনি যদি পড়াশোনার পাশাপাশি কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় এ ব্যাপারে ভাবছেন, তাহলে কোনো চিন্তা করবেন না।
কারণ, আজকের আর্টিকেলে আমি স্টুডেন্টদের জন্য অনলাইনে ইনকাম করার এমন উপায় গুলো বলতে চলেছি, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সহজেই বাড়তি ইনকাম করতে পারবেন।
এমনকি আপনি চাইলে ভবিষ্যতে এই কাজগুলোকে আপনার ক্যারিয়ার (career) হিসেবে নিতে পারবেন।
তবে, এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার কাজের বিষয়ে যথেষ্ট সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
বর্তমানে অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি বা ব্যবসা আইডিয়া খুঁজছেন। আপনারা চাইলে এইসব উপায়গুলোর মাধ্যমে আপনার প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সাবলম্বী হতে পারেন।
তাহলে চলুন পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয় করার জন্য কী কী অনলাইন কাজ রয়েছে এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত জেনে নিই।
মনে রাখবেন, নিচে উল্লেখ করা প্রত্যেকটি কাজের ক্ষেত্রেই আপনাকে কোনো ধরনের বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্ট করার দরকার হবে না।
১। ফ্রিল্যান্সিং করুন
ছাত্রদের জন্য অনলাইনে টাকা রোজগার করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন কাজ হলো ফ্রিল্যান্সিং।
কারণ, যেকেউ নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো সময়ে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে পারেন।
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করার জন্য সবচেয়ে প্রথমে আপনাকে যেকোনো কাজের বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে আপনি বিভিন্ন ধরনের কাজ পেতে পারবেন।
কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কাজ নিম্নরূপ:
- লেখালেখি
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ভিডিও এডিটিং
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
- ডাটা এন্ট্রি
- ট্রান্সলেশন
এই কাজগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি কাজ ভালোভাবে শিখে আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ খুঁজতে পারবেন।
কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলো:
- Fiverr – ছোট কাজ এবং দ্রুত অর্থ উপার্জনের জন্য।
- Upwork – বড় এবং পেশাদার কাজের জন্য।
- Freelancer – নানা ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত।
- Toptal – ভালো মানের কাজের জন্য।
- PeoplePerHour – নির্দিষ্ট সময়ের কাজের জন্য।
প্রথমে আপনাকে ছোট এবং সহজ কাজ দিয়ে শুরু করতে হবে। এতে ধীরে ধীরে আপনার প্রোফাইলে রিভিউ এবং রেটিং বাড়বে যা ভবিষ্যতে বড় কাজগুলো পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।
২। ব্লগিং ও কনটেন্ট রাইটিং
যদি লেখালেখির প্রতি আপনার আগ্রহ থাকে তাহলে ব্লগিং আপনার জন্য অনলাইনে আয়ের একটি দুর্দান্ত উপায়।
কেননা, বর্তমানে যেকোনো বয়সের মানুষ ঘরে বসে ব্লগিং করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
আপনি নিজের একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করে সেখানে আকর্ষণীয় ও তথ্যবহুল কনটেন্ট লিখে আয় করতে পারবেন।
আর ব্লগিং করে একবার সফলতা অর্জন করতে পারলে আপনাকে আলাদা করে আর কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতে হবে না।
আপনি ব্লগিংকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবেন এবং ফুল টাইম ব্লগিং করে বাড়িতে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
ব্লগিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার উপায়গুলো:
- গুগল এডসেন্স
- এফিলিয়েট মার্কেটিং
- স্পনসরশিপ
জেনেনিন ওয়েবসাইট খুলে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?
যদি আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্যান্য ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েবসাইটে লেখালেখি করেও আয় করতে পারবেন।
এজন্য আপনি লেখালেখি করে আয় করার সেরা ১০টি ওয়েবসাইট এর বিষয়ে জেনে নিতে পারেন।
তাছাড়াও লেখালেখিতে আপনার ভালো দক্ষতা থাকলে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে ক্লায়েন্টদেরকে আর্টিকেল লিখে দিয়েও ইনকাম করতে পারবেন।
৩। টিউশন বা শিক্ষাদান
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আয় করার জন্য একটি প্রচলিত উপায় হলো টিউশনি বা ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো।
যদি আপনি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় (subject) ভালোভাবে পড়াতে ও বোঝাতে পারেন, তাহলে টাকা রোজগার করার জন্য এটি একটি সহজ ও কার্যকর মাধ্যম।
টিউশনির সুবিধাসমূহ:
- শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে কম সময়ে ভালো আয় করতে পারবেন।
- অন্যদের পড়ানোর সময় আপনার পড়ালেখার বিষয়গুলো রিভিশন করে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
- ব্যক্তিগত বিকাশ এবং যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও টিউশন দিতে পারেন।
এজন্য আপনাকে একটি ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে সেখানে শিক্ষামূলক ভিডিও আপলোড করতে হবে।
যখন প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থীরা ইউটিউবে আপনার ভিডিওগুলো দেখবে, তখন আপনি ইউটিউব মনিটাইজেশন এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
৪। ডাটা এন্ট্রির কাজ করুন
ডাটা এন্ট্রি কাজ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করার জন্য একটি সহজ ও সুবিধাজনক মাধ্যম।
এই কাজের ক্ষেত্রে আপনার তেমন প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকার নেই।
আপনি ঘরে বসেই বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর data entry কাজগুলো সম্পন্ন করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যেসব প্লাটফর্মে ডেটা এন্ট্রির কাজ পেতে পারবেন:
- Upwork
- Fiverr
- Freelancer
- Social media
- কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
প্রথমের দিকে কাজগুলো করতে আপনি কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে ধীরে ধীরে আপনি কাজের ধরন বুঝতে পারবেন এবং তারপর আর সমস্যা হবে না।
শুরুতে আপনি ক্যাপচা পূরণ বা বিভিন্ন ফর্ম পূরণের কাজগুলো করতে পারেন।
ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য শুধু কম্পিউটার এবং টাইপিং দক্ষতা থাকলেই যথেষ্ট।
আজকাল স্কুল ও কলেজের অনেক শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে বিভিন্ন কোম্পানির ডেটা এন্ট্রির কাজগুলো সম্পন্ন করে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করছেন।
অবশ্যই পড়ুন: টাকা ইনকাম করার সহজ উপায় কি?
৫। অনলাইন কনটেন্ট ক্রিয়েশন
আপনি যদি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং যেকোনো বিষয় ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে content creation আপনার জন্য একটি লাভজনক ইনকামের উপায় হতে পারে।
বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে স্টুডেন্টরা তাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি extra income করার জন্য এই কাজটিকে বেছে নেয়।
অনলাইনে কনটেন্ট তৈরি করে আয় করার জন্য আপনার প্রথমেই দরকার হবে একটি ইউটিউব চ্যানেল বা ফেসবুক পেজ।
ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করে আয় করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করুন।
- লাভজনক ইউটিউব কনটেন্ট আইডিয়া গুলোর মধ্যে থেকে আপনার চ্যানেলের জন্য যেকোনো একটি ভিডিও টপিক সিলেক্ট করুন।
- বাছাই করার নিস বা টপিকের ওপর নিয়মিত ভালো মানের ভিডিও তৈরি করুন।
- নিয়মিত আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করুন।
- চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম সম্পূর্ণ হয়ে গেলে মনিটাইজেশন চালু করে ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করুন।
ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করে আয় করার ধাপসমূহ নিম্নরূপ:
- সবচেয়ে প্রথমে একটি ফেসবুক পেইজ তৈরি করুন।
- পেইজে যেকোনো একটি নিস বা টপিকের ওপর নিয়মিত ভিডিও বানিয়ে আপলোড করুন।
- এরপর ফেসবুক মনিটাইজেশন সিস্টেমসমূহ যেমন: In-stream ads, reels monetization, facebook star, fan subscription ইত্যাদি উপায়ে আয় করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য বর্তমানে ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলকেও ব্যবহার করা যায়।
এক্ষেত্রে আপনাকে নিজের প্রোফাইলে professional mode চালু করে নিতে হবে।
৬। গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ভিডিও এডিটিং
আপনার যদি Photoshop, Illustrator বা Canva এই ধরনের সফটওয়্যার গুলোর সাহায্যে ভালো গ্রাফিক্স তৈরির দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
Fiverr, Upwork, Freelancer ইত্যাদি freelancing marketplace গুলোতে আপনি graphics designing এর কাজ পেতে পারবেন।
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনি যেসকল কাজ করতে পারবেন:
- লোগো তৈরি
- ওয়েবসাইটের ডিজাইন
- সোশ্যাল মিডিয়া গ্রাফিক্স তৈরি
- বিজ্ঞাপনের জন্য ভিজ্যুয়াল তৈরি
- পোস্টার এবং ব্যানার ডিজাইন
- মোবাইল অ্যাপের জন্য ইন্টারফেস ডিজাইন
- কাস্টম ইলাস্ট্রেশন তৈরি
- ডিজিটাল পেইন্টিং
- বিভিন্ন আর্ট প্রজেক্টে কাজ করা
- মোশন গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশন
- স্লাইডশো এবং প্রেজেন্টেশন ডিজাইন
- ভিডিও এডিটিং ও গ্রাফিক ইফেক্ট
আপনি ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে উপরে বলার কাজগুলো ক্লায়েন্টদের থেকে নিতে পারবেন।
তাদের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময়ে কাজগুলো সম্পন্ন করে আপনি ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হতে হবে।
প্রথমের দিকে ছোটো ছোটো প্রজেক্টগুলোতে কাজ করে যখন আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে, তখন গ্রফিক্স ডিজাইনের বড় প্রজেক্টগুলো সম্পন্ন করে প্রচুর পরিমাণে টাকা রোজগার করতে পারবেন।
আপনি চাইলে মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিজের কাজ প্রচার করে কাজ পেতে পারবেন।
৭। ফটোগ্রাফি এবং ছবি বিক্রি করুন
বর্তমানে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীরাই তাদের মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে অধিক পছন্দ করে থাকে।
যদি ছবি তোলা আপনার শখ হয়ে থাকে, তাহলে আপনার শখকে কাজে লাগয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
কারণ, ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোকে লোকেরা তাদের তোলা ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার সুযোগ পান।
আপনাকে শুধুমাত্র স্টক ফটোগ্রাফি সাইটগুলোতে আপনার তোলা ছবি আপলোড করতে হবে। এরপর যেকোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি সেই ছবি কিনলে আপনি প্রতিটি বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কমিশন পাবেন।
কয়েকটি জনপ্রিয় স্টক ইমেজ ওয়েবসাইট হলো:
- Shutterstock
- Adobe Stock
- iStock
- Getty Images
- Alamy
এর ধরনের সাইটগুলোতে ছবি আপলোড করার জন্য আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর দরকার হবে না।
তবে ছবি তোলার জন্য একটি ভালো মানের ক্যামেরা বা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে।
আপনাকে অবশ্যই ইউনিক এবং ভালো মানের ছবি তলতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রকৃতি, মানুষ, খাবার, স্থাপত্য, ইত্যাদির ছবি তুলতে পারেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন ছবি এডিটিং সফটওয়্যার যেমন: Adobe Photoshop, Lightroom ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা আবশ্যক।
৮। মোবাইল অ্যাপ তৈরি করুন
পড়াশোনার পাশাপাশি টাকা আয় করার একটি সহজ এবং লাভজনক উপায় হলো মোবাইল অ্যাপ বানানো।
কেননা বর্তমান সময়ে প্রত্যেকের কাছে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল অ্যাপগুলোর চাহিদা অনেক বেশি।
তাই আপনার যদি কোডিং দক্ষতা বা অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে আগ্রহ থাকে, তাহলে এটি হতে পারে আপনার উপার্জনের একটি কার্যকর মাধ্যম।
অ্যাপ তৈরি করে ইনকাম করার ধাপসমূহ:
- প্রথমে আপনাকে নিজের একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করতে হবে।
- অ্যাপে Google AdMob এর বিজ্ঞাপন সেট আপ করতে হবে।
- অ্যাপটিকে গুগল প্লে স্টোরে পাবলিশ করতে হবে।
- ইউজার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে
বর্তমানে AppsGeyser, AppMySite, Appy Pie এই ধরনের ফ্রি অ্যাপ বিল্ডার ওয়েবসাইট গুলোর সাহায্যে আপনি কোনো ধরনের কোডিং জ্ঞান ছাড়াই মোবাইল দিয়ে নিজের এন্ড্রয়েড অ্যাপ বানিয়ে নিতে পারবেন।
তবে আপনি যদি প্রফেশনাল টাইপের অ্যাপ বানাতে চান তাহলে একজন অ্যাপ ডেভেলপার হায়ার করতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু টাকা অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে।
যদি আপনি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে ইনকাম করার কথা ভাবছেন, তাহলে আপনাকে যেমন তেমন অ্যাপ বানালে চলবে না। মানুষের কাজে আসে এমন বিষয়ে আপনাকে অ্যাপ তৈরি করতে হবে।
যেসব বিষয়ে অ্যাপ তৈরি করা লাভজনক:
- গেমিং অ্যাপ: সহজ গেম যা মানুষ অনেকক্ষণ খেলতে পছন্দ করে।
- হেলথ ও ফিটনেস অ্যাপ: যেমন, মেডিটেশন অ্যাপ, ফিটনেস ট্র্যাকিং অ্যাপ।
- প্রোডাক্টিভিটি অ্যাপ: যেমন, টাস্ক ম্যানেজার, নোট-মেকিং অ্যাপ।
- এডুকেশনাল অ্যাপ: শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ, টিউটোরিয়াল বা লার্নিং অ্যাপ।
- ই-কমার্স অ্যাপ: প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য।
- লোকাল সার্ভিস অ্যাপ: যেমন, খাবার ডেলিভারি বা ক্যারিয়ার গাইড অ্যাপ।
৯। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট বলতে বোঝায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন: Facebook, Instagram, Twitter এর পেইজ পরিচালনা করা।
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারকে ক্লায়েন্টের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজে কনটেন্ট পোস্ট করতে হয়, ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় এবং ব্র্যান্ডের প্রচারণা করতে হয়।
বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ পরিচালনার জন্য দক্ষ ম্যানেজার খুঁজে থাকে।
তাই পড়াশোনার পাশাপাশি টাকা রোজগার করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট একটি চমৎকার উপায় হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা:
- ক্লায়েন্ট এবং অডিয়েন্সের সাথে প্রফেশনালভাবে যোগাযোগ করার দক্ষতা থাকতে হবে।
- আকর্ষণীয় ক্যাপশন এবং হ্যাশট্যাগ লিখতে পারতে হবে।
- Facebook, Instagram এবং Twitter এর অ্যালগরিদম সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক।
- SEO (Search Engine Optimization) এবং SEM (Search Engine Marketing) সম্পর্কে ধারণা নিন।
- ব্যানার, পোস্টার, লোগো ইত্যাদি ডিজাইন করা শিখুন।
- ভিডিও এডিটিং শিখুন।
আপনি fiverr, upwork, freelancer ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে social media management এর কাজ পেতে পারবেন।
অবশ্যই পড়ুন: মেয়েদের ঘরে বসে আয় করায় ১৫টি উপায়
১০। গেম লাইভ স্ট্রিমিং করুন
পড়াশোনার পাশাপাশি গেম লাইভ স্ট্রিমিং করে আয় করা বর্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর মাধ্যম।
আপনি যদি গেম খেলতে পছন্দ করেন এবং গেমিংয়ে দক্ষ হন, তাহলে এটি আপনার একটি দুর্দান্ত আয়ের উৎস হতে পারে।
গেম খেলার সময় আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিন সরাসরি দর্শকদের কাছে সম্প্রচার করাকে গেম স্ট্রিমিং বলা হয়। গেম লাইভ স্ট্রিমিং করে দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে ভালো পরিমাণে আয় করা সম্ভব।
অনলাইনে গেমিং করার জন্য জনপ্রিয় ব্যাটল রয়্যাল গেমস, মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন ব্যাটল অ্যারেনা, ফাইটিং গেমস এই ধরনের গেমগুলো আপনাকে খেলতে হবে।
তবে বর্তমানে Free Fire, PUBG Mobile/PC, Call of Duty এই কয়েকটি ব্যাটল রয়্যাল গেমস প্রচুর জনপ্রিয়।
আজকাল অনেক বিখ্যাত গেমার রয়েছেন যারা কেবল Free Fire লাইভ স্ট্রিমিং করে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছেন।
গেমিং এর জন্য আপনার যেসব জিনিসের দরকার হবে:
- একটি শক্তিশালী পিসি বা ল্যাপটপ।
- গেমিং মোবাইল ফোন।
- ভালো মানের ব্রডব্যান্ড সংযোগ
- একটি ভালো মানের মাইক্রোফোন এবং ওয়েবক্যাম।
গেম স্ট্রিমিং করার জন্য আপনি ইউটিউব বা ফেসবুক যেকোনো একটি প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন।
অবশ্যই পড়ুন: বাংলাদেশে কোন গেম খেলে টাকা আয় করা যায়?
পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি বা ব্যবসা করা সম্ভব?
পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি বা ব্যবসা করা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটা সম্ভব।
অফলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
শিক্ষার্থীদের পুঁজি সাধারণত সীমিত থাকে, ফলে তারা কোনো ব্যবসায় বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে পারে না।
তাছাড়া ব্যবসায় ক্ষতি হলে তা পড়াশোনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, ড্রপশিপিং বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির মতো ব্যবসা গুলো কম পুঁজি দিয়েই শুরু করা সম্ভব।
তাছাড়া শিক্ষার্থীরা চাইলে ফুড ডেলিভারি বা হোমমেড পণ্যের ব্যবসা, ডিজিটাল প্রোডাক্ট যেমন: ই-বুক, অনলাইন কোর্স বিক্রি ইত্যাদি ব্যবসাও করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করতে পুঁজির প্রয়োজন হয় না। ছাত্রছাত্রীরা চাইলে অনলাইন রিমোট চাকরি গুলো করে ঘরে বসে উপার্জন করতে পারে।
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রোগ্রামিং বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো কাজ পেতে পারবেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করার উপায়: FAQ’s
হ্যাঁ, সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা এবং সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন ব্যবসা, টিউশনি ইত্যাদি কাজগুলো পার্ট-টাইম করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, টিউশনি বা অনলাইন কোচিং, অনলাইন কন্টেন্ট ক্রিয়েশন ইত্যাদি উপায়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি টাকা রোজগার করতে পারেন।
একজন স্টুডেন্ট হিসেবে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করার জন্য আপনাকে ব্লগিং, কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি যেকোনো একটি কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে হবে। আপনার কাজের সাথে জড়িত যেকোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
বর্তমান যুগে প্রত্যেক স্টুডেন্টদের সঠিকভাবে পড়াশোনা করার পাশাপাশি ডিজিটাল স্কিল বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা গুলো অর্জন করা উচিত। এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তারা অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জন করে নিজের খরচ নিজেই চালাতে সক্ষম হবে।
একজন শিক্ষার্থী তার লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করলে সময় ব্যবস্থাপনার সমস্যা, ক্লান্তি, কাজ এবং পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারা, ক্লায়েন্টদের সময়মতো কাজ ডেলিভারির চাপ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে পারে।
উপসংহার
পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করার উপায়গুলো শুধু আপনাকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করবে না, বরং আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে।
স্টুডেন্ট অবস্থায় অনলাইনে ইনকাম করার জন্য আপনি উপরের যেকোনো একটি উপায় বেছে নিতে পারেন।
উপরে স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকামের যেসব উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, এগুলোর সবই কার্যকর এবং প্রমাণিত।
কিন্তু আপনি চাইলেই রাতারাতি কাজ শিখে অনলাইন থেকে ইনকাম করা শুরু করতে পারবেন না।
তবে সফল হতে হলে আপনার অবশ্যই ধৈর্য থাকতে হবে এবং পরিশ্রম করতে হবে।
অবশ্যই পড়ুন: